দার্জিলিং ভ্রমণ – পর্ব ০৫ (দার্জিলিং থেকে কালিম্পং)
শুভ সকাল দার্জিলিং। যেহেতু আজকেই দার্জিলিংএ শেষ সকাল। একটু পরেই যাত্রা কালিম্পং এর উদ্দেশ্য। কালিম্পং এর গল্প বলবো। একটু ধর্য্য ধরুন। তবে এখন দার্জিলিং এর সকালটা উপভোগ করার সময়। এরি মাঝে আপনি যদি আমার ৪র্থ পর্ব না পড়েন তাহলে এখানে ক্লিক করে ৪র্থ পর্বটি পড়ে আসতে পারেন। আর আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, আগের পর্ব এর থেকে বেশি সময় নিয়ে নিয়েছি এই পর্বটি লিখতে।
আজ দুইদিন দার্জিলিং। কিন্তু এখনো দার্জিলিং এর প্রধান আকর্ষণ গুলোর একটি মল রোডের মল মাঠ/চত্তর দেখা হয় নি। সেখানের কবুতর দেখা হয় নি। সকালের মেঘ উপভোগ করা হয় নি। তো আজকের সকালের মিশন, মল চত্তর। বেরিয়ে পরলাম, তখন ঘড়িতে সকাল ৬.৩০ মিনিট। আমি সাব্বির আর মাহবুব ভাই। বাকিরা রেডি হচ্ছেন।
একটা কথা বলতেই হয়, ভোরবেলার দার্জিলিং আসলেই অনেক সুন্দর। এত বড় একটি খোলা যায়গা। চারপাশে সাদা মেঘের আস্তর। ঠিক মাঝখানে বেশ কিছু কবুতর। মাজে মাঝে কেউ কেউ খেতে দিচ্ছে। আবার কুকুররাও কবুতর এর সাথে খেলা করছে। এর মাঝে একটি মজার
আমরা গুগল ম্যাপে একটি হোটেল খুজছি। মুসলিম হোটেল। তবে হোটেলের নামটা সঠিক জানা নেই। ভুলে গেছি। খুজেও পেলাম। একটু নিচে হোটেলটা। পাসে মসজিদ আছে। অনেকে নামাজ পরছে। আমরা হোটেলে ঢুকলাম। সবাই পরোটা আর গরুর পায়া/নেহারি অর্ডার করেছে। আমি আর কি? আমি নিলাম, পরোটা, সবজি, ডিম আর মুরগির কারি। অহ হা, এরি মাঝে কিন্তু বাকিরাও চলে এসেছে। সবাই মিলে খেয়ে আমরা হোটেলের দিকে।
মাহবুব ভাই আর সুমন ভাই গেলেন কালিম্পং এর জন্য গাড়ির ব্যাবস্থা করতে। আমরা হোটেলে এসে, ফ্রেশ হোয়ে, গোসল করে নিলাম। একটা তথ্য দিয়ে রাখি, এখানের হোটেল গুলতে, গরম পানির ব্যাবস্থা আছে। তাই আপনি নির্দিধায় গোসল করতে পারবেন।
গাড়ি রেডি। আমাদের নিচে নামতে হবে। গাড়ি দাড়িয়ে আছে রামাদা হোটেলের সামনে। আমরা ব্যাগ নিয়ে, হোটেলে চেকআউট করে বেরিয়ে পরি। গাড়িতে উঠে এখন কালিম্পং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা।
আমাদের এবারের ড্রাইভারও পাহাড়ি। খুব ভালো ব্যাবহার। আমার কেনো জানি নাম মনে থাকে না। তাই নাম বলতে পারি না। তিনি এতটাই ভালো যে, যাত্রা পথে আমরা যখন চা খেতে একটু বিরতি চাই, তিনি তার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। অবশ্য উনার বাড়ি, রাস্তার মাঝেই। তাই নিয়ে গিয়েছিলেন। উনার বাড়িতে ছোট্ট একটা খাবার হোটেলের মত অংশ থাকায় আমাদের উপকার হয়েছে। মাহবুব ভাই আর সুমন ভাই কিছু জুসের বোতল কিনে নিচ্ছে। বাকিরা চা। আমার রঙ চা। এই প্রথম আমি রঙ চায়ে একটু স্বাদ পাই। 🙂 ভালো লেগেছিল।
এই ফাকে দেখলাম, ড্রাইভার গাড়িটা একবার ধুয়েও নিয়েছে।
যাই হোক। আমাদের যাত্রা শুরু। আমরা ভাবতেই পারছি না, যে দার্জিলিং থেকে কালিম্পং যাওয়ার রাস্তা এত সুন্দর হয়। চারিদিকে সবুজ, মেঘ আর পাহাড় সাথে ভয়ঙ্কর খাদ।
চলতে চলতে বিশাল পাহাড় থেকে নেমে আসি সমতলে। কারন আমাদের দার্জিলিং থেকে কালিম্পং যেতে পাড়িদিতে হবে তিস্তা নদী। অবাক লাগছে নাকি? এখানে আবার তিস্তা নদী এলো কোথা থেকে? মূলত দার্জিলিং আর কালিম্পংকে আলাদা করে এই তিস্তা নদী।
আমি তিস্তা ব্রিজের উপর নামলাম। একটু ভিউ দেখবো। ছবি তুলবো। কিন্তু এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাচ্ছে না। কানে প্রচুর ব্যাথা করছে। এই বেথার একটা বিশেষ কারন আছে। বলছি।
আমাদের কানের পর্দার ভিতরে কিছু ফাকা অংশ থাকে। এখানে বাতাশ থেকে। আর আমরা সবাই জানি, বায়ুর একটা চাপ আছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায়, এই বায়ুর চাপ তত কমতে থাকে, আর নিচে নামলে বাড়তে থাকে। যখন উপরে উঠছিলাম, তখন কিন্তু বলেছিলা, কানের ভিতর খুব অসসস্থি লাগছে। সেটার কারন ছিল, উপরে ওঠার সময় চারপাশের বায়ুর চাপ কমতে থাকে। আর আমার কানের ভিতরে তো বায়ুর চাপ বেশি। তারা বের হতে চাচ্ছে। তাই এমন হচ্ছিল। এটা আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। দ্রুত রেহাই পেতে ঢোক গিলতে হতে কয়েক বার।
আর নামার সময় কান ব্যাথা করছিল, এটার কারন হল, আমি এতদিন উপরে ছিলাম। তার মানে ওখানে বায়ুর চাপ কম। আমার কানের বায়ুর চাপও সামঞ্জস্য হয়ে গেছে। এখন যেহেতু নিচে নামছি, বাহিরের বায়ুর চাপ বেশি, আর আমার কানের ভিতর কম। বাইরের বাতাস আমার কানে ঢুকতে চাচ্ছে, তাই প্রচুর চাপ দিচ্ছে। তাই কান বেথা করছিল। এর থেকেও মুক্তি পেতে একটাই উপায়। বেশি বেশি হাই তুলুন, অথবা ঢোক গিলুন।
যেহেতু এখন আবার আস্তে আস্তে উপরে উঠছি, কানের ব্যাথাটাও একটু একটু কমছে। ওই বেথায় এখন আর কে নজর দেয়, প্রকৃতির কাছে থেকে, এসব কোনো বিষয় নাহ।
কালিম্পং মূল শহরটা একটু ছোট। বেশ গোছানো। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটা ছোট্ট শহর। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, কালিম্পং শহরে সব রাস্তা ওয়ান ওয়ে। যদি আপনি ভুল করে গাড়ি নিয়ে একবার কোনো রাস্তায় ঢুকে পরেন, তাহলে আপনাকে আবার সম্পুর্ন কালিম্পং ঘুরে আসতে হবে।
আমরা এখন কালিম্পং ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে। হোটেল খুজতে হবে। নামতেই, একজনকে পেলাম, সে আমাদের হোটেল ঠিক করে দিয়েছে। সাথে তার গাড়িতে আমরা সাইট সিন করবো।
আমাদের লাক খুব ভালো। এইবার খুব কমেই দুই রুম পেয়েছি। তিন জন করে এক রুমে। ২ টা বেড। একটা ডবল আর একটা সিঙ্গেল। খুব পরিচ্ছন্ন, ও গোছানো একটি রুম। সাথে অয়াইফাই আছে খুব ফাস্ট। আমি সাব্বির আর সুমন ভাই এক রুমে, সাথে মাহবুব ভাই, সাখাওয়াত র শোভন ভাই এক রুমে। তবে একটু হিংসে হচ্ছিল, যে মাহবুব ভাই দের রুমে বারান্দা আছে।। 🙁
সবে মাত্র ফ্রেশ হয়ে হোটেলে সুয়েছি। ঘড়িতে ১১টার কাছা কাছি।
রুমে মাহবুব ভাই এর আগমন। “কি হইলো? আপনারা সবাই শুয়ে আছেন কেন? চলেন চলেন, ওঠেন। সাইট সিন করতে যাবো। আজকে প্যারাগ্রাডিং করবো সবাই।”
আমরা রেডি। বেশি কিছু দেখবো না আজ। হাতে গোনা কয়েকটা জিনিস।
বেরিয়ে পরলাম এবং একটা ছোটখাটো শখ খেলাম। আমরা এই পর্যন্ত সব সময় টাটা সুমুর ১০ সিটের গাড়ি নিয়েছি। কিন্তু একটু ভুলের কারনে এবার নিতে হয়েছে ছোটো মাইক্রো গুলো। যেখানে ৫ জন আরামের বসতে পারে। কিন্তু আমাদের ৬ জনের জন্য একটু কষ্ট হয়ে গেছে।
আমরা এখন যাচ্ছি ডেলো পাহারে। যায়গাটা সুন্দর। তবে, তার আগে আমরা সবাই প্যারাগ্লাইডিং করবো। মানে প্যারাসুটে করে, আকাশে উড়বো। আর আমাদের সবার থেকে সাখাওয়াত ভাই এর খুব ইচ্ছা। গেলাম কাউন্টারে। ওমা, ১০ মিনিটের জন্য ৩০০০ রুপি। প্রায় সবাই একটু থমকে গেলাম। যেহেতু এখানে আমাদের একটু টাকাটা সীমিত, তাই আমরা কেউ আর করলাম না। তবে সাখাওত ভাই করেছে। ভিডিও সহ ৩৫০০ রুপি।
আমরা তাহলে, এখন কই যাবো? চলুন, যাই ডেলো পাহাড়ে। এটা এখানেই। মূলত, এটা বিশাল বড় একটি হোটেল/রিসোর্ট। এখান থেকে প্রায় পুরো কালিম্পং দেখা যায়। দূরের শহর, মাঠ, গাছ, পাহাড় ও মেঘ। আমরা যেহেতু একটু কালন্ত, তাই আমরা একটু জিরিয়ে জিরিয়ে দেখছি। মানে একটু বসছি, মেঘ আসছে। মেঘ ধরছি। ঘুরছি। ছবি তুলছি।
এখানে মেঘ আর সূর্যের লুকোচুরি খেলাটা বেশ উপভোগ করা যায়। এই দেখবেন, প্রখর রোদ। সূর্যের উত্তাপে, গরম জামা খুলে ফেলেছেন। আবার দেখবেন, ২ মিনিটের মদ্ধে, মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে আপনাকে। আমি আগে বলেছি, আবারো বলছি, আমি কিরকম সৌন্দর্য নিজ চোখে দেখেছি, আপনাদেরও আগে নিজ চোখে দেখতে হবে। অনুভোব করতে হবে। নাহলে আসল অনুভতি বুজতে পারবেন না।
এতক্ষণে সাখাওয়াত ভাই চলে এসেছে। আকাশে ওরা শেষ উনার। আমি একটা উচু পাহারের কার্নিসে বসে, নিচে পা ঝুলিয়ে, পাহাড়ের দিকে মুখ করে বসে আছি।
সামনে অপরূপ সৌন্দর্য। প্রায় ২০ মিনিটের মত চোখ বন্ধ করে ছিলাম। মেঘ আর প্রকৃতিকে অনুভব করার চেষ্টা করছিলাম। আমার দেখা দেখি, মাহবুব ভাই আর শোভন ভাইও এসেছে। এরপর এক চুমুক কফি।।
এখান থেকেই আমরা ফ্রাইডরাইস আর চিকেন কারি খেয়ে দুপুরের খাবারটা সেরে নিলাম। প্রায় বিকাল হয়ে এসেছে। আমরা এবার যাচ্ছি গলফ ক্লাবে। সেখান থেকে ঘুরে গেলাম একটি ক্যাকটাস গার্ডেনে। তাদের ৫ টায় বন্ধ হয়ে যায়। আমাদের গাড়ি গিয়ে সেখানের দরজার ব্রেক করেছে, আর তারা তালা টিপ দিয়েছে। অনেক রিকোয়েস্ট করলাম। কে শোনে কার কথা? বললাম, আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি। বাংলাদেশ থেকে। তাদের রিপ্লে ছিল, “আমরা ০৫ টার পরে খোলা রাখি না। বাংলাদেশ ছাড়াও অনেক দূর থেকে থেকে মানুষ আসে। তাও আমাদের কিছু করতে পারবো না। আপনারা কাল আসেন।”
মাহবুব ভাই এর মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছে। উনার খহুব ইচ্ছা ছিল, এটা দেখার।
এবার আমরা যাচ্ছি, একটা টেম্পেলে। বুদ্ধিস্ট টেম্পেলে। এখান থেকে কালিম্পংএর সন্ধার খুব সুন্দর ভিউ দেখতে পাওয়া যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিলাম। এটা সুন্দর। চারদিকে ফাকা। দূরে বিভিন্ন আলো দেখা যাচ্ছে…
আজ অনেক কিছু বলে ফেলেছি। আবার কাল বলবো। কালিম্পং এর আসল সৌন্দর্য আসছে… মন্তব্য করার জন্য কমেন্ট বক্স খোলা আছে। মন্তব্য করতে পারেন।